শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে জেনে নিন

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে এই বিষয়ে একজন মুমিন ব্যক্তির জেনে রাখা প্রয়োজন। পবিত্র রমজান মাসের সবচেয়ে ফজিলত এবং গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো শবে কদরের রাত। এই শবে কদরের রাত একটি বরকতময় রাত যা রমজান মাসের শেষে হয়ে থাকে। তাছাড়াও এই লাইলাতুল কদরের রাতে পবিত্র কোরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছিল। 

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে জেনে নিন

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজকে আমি আপনাদের সাথে শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদরের ফজিলত ও আমল, শবে কদরের নামাজ কোন কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় সহ সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাই আজকের এই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল। 

শবে কদর কি? 

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হলো "অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত" বা "পবিত্র রজনী"। ইসলাম ধর্ম মতে, লাইলাতুল কদরের রাতে ইসলাম ধর্মের ধর্মপ্রচারক মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর অনুসারীদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাই প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে তারা বিশ্বাস করে। 

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে

একজন মুসলিম হিসেবে আপনাকে শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে হবে তা জেনে রাখা প্রয়োজন। রমজান মাসের শেষ দশদিন অর্থাৎ নাজাতের দশদিন বিজোড় রাতের রাতের মর্যাদা এতটাই বেশি যে যারা সারা বছর ধরে গুনাহে লিপ্ত ছিল তারাও মহান আল্লাহর ইবাদত করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকেন। এ বছর শব-ই-কদর- ৬ এপ্রিল, (শনিবার) অর্থাৎ রমজান মাসের ২৭ তারিখে হবে। তবে এটা সম্পূর্ণ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।

শবে কদরের দোয়া

সারা বছরের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হচ্ছে মহান আল্লাহর ইবাদত করা। তবে শবে কদরের রাতে দোয়া করলে মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তাই আমাদের অবশ্যই শবে কদরের দোয়া জানতে হবে। নিচে শবে কদরের দোয়া উল্লেখ করা হলো-

একদিন হযরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদররের রাতে কোন দোয়া পড়ব।

রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেন, ‘তুমি বলো, ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ 

আরবী উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’ 

বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনার পছন্দ। অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫১৩)। 

অর্থাৎ সারাদিন-রাত বেশি বেশি এই দোয়া করবেন। এই দোয়াটি হাঁটা-চলা-শোয়া অবস্থায় করা যায়। তবে রমজানের শেষ  দশকে নিচের দোয়াগুলো আমাদের বেশি বেশি পড়া উচিত।  

১. نَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ

উচ্চারণঃ ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর। 

অর্থঃ আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে।

২. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ

উচ্চারণঃ ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।

অর্থঃ শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?

৩. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

উচ্চারণঃ লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।

অর্থঃ শবে-কদরের রাত হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

৪. تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ

উচ্চারণঃ তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।

অর্থঃ এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।

৫. سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

উচ্চারণঃ ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা’ইল ফাজর।

অর্থঃ এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

আশা করি আপনি শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে জেনে খুশি হয়েছেন। এখন আপনি শবে কদরের দিন উপরের দোয়াগুলো পড়তে পারেন। তাছাড়াও রমজানের শেষ দশদিন এই দোয়াগুলো নিয়মিত পড়বেন। 

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত

শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত এই সমন্ধে আমরা অনেকেই জানতে চাই, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হবে এর কোন সহিহ হাদিস খুজে পাওয়া যায় নি। তবে, নূন্যতম আট রাকাত থেকে শুরু করে আপনি যত রাকাত পড়তে পারেন। 

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম জেনে নিন। 

আপনাদের দুই রাকাত করে নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। যত বেশি ২ রাকাত করে নফল নামাজ পড়া যায় ততই গুনাহ মাফ হবে এবং আপনার সাওয়াব হবে। তবে নামাজের পাশাপাশি আপনি এই শবে কদরের রাতে কোরআন কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন ও ইস্তেগফার পড়তে পারেন ও গুনাহ মাফের আশায় আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতে পারেন। 

শবে কদরের নামাজের নিয়ত

যদি আপনি শবে কদরের নামাজ আদায় করতে চান তবে আপনাকে শবে কদর নামাজের নিয়ত জেনে নিতে হবে। আজকের এই পোস্ট পড়ে আপনি শবে কদরের নামাজের নিয়ত জেনে নিন। 

আরবী উচ্চারণঃ ‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া'লা রাকআ'তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।’

বাংলা অর্থঃ ‘আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবর।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম

শবে কদরের নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় এই ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি না। তাই শবে কদরের নামাজের নিয়ম আমরা জানতে চাই, মূলত লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। শবে কদরের রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় যত সুন্দর ও মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। দুই রাকআত, দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি পড়তে পারবেন। এছাড়াও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য  কোরআন কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন ও ইস্তেগফার পড়তে পারেন।  

শবে কদরের ফজিলত সমূহ জেনে নিন 

শবে কদরের রাত হলো অনেক মর্যাদাপূর্ণ রাত ও হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি মাস হলো রমজান মাস। পবিত্র কুরআন মাজিদ নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে হাজারের মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম ও মহা সম্মানিত রাত হিসেবে আমারদের জন্য দান করেছেন। প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে কোনো এক বিজোড় রাত হলো ভাগ্য নির্ধারণ বা লাইলাতুল কদরের রাত। শবে কদরের অনেক ফজিলত রয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো। 

  • হেদায়েত সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে শবে কদর যে কোন মুমিন ব্যক্তির জন্য বরকতময়।
  • নবী (স.) বলেছেন  রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে মানব জাতির শান্তি বার্তা হয়ে কুরআন নাজিল হয়েছে।
  • নবী (স.) বলেছেন, শবে কদরের অনুসন্ধান যে মুসলিম ব্যক্তি করবে তার জন্য নিয়ামতের সকল দরজয়া খুলে দেওয়া হবে। 
  • রমজানের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯ তম রাতকে মর্যাদাপূর্ণ রাত ধরা হয়।
  • মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল তাই শবে কদরের রাতে বান্দাদের ক্ষমা করে দেন। 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ 

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে এই বিষয় নিয়ে আপনার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? চলুন তাহলে সেই উত্তরগুলো জেনে নেই। 

শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে কত হবে?

এ বছর শবে কদর হবে ৬ এপ্রিল অর্থাৎ ২৭ রমজান। তবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে চাঁদ দেখার উপর। 

শবে কদরের রাতে কত রাকাত নামাজ পড়তে হবে? 

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত পড়তে হবে এর কোন সহিহ হাদিস খুজে পাওয়া যায় নি। তবে, নূন্যতম আট রাকাত থেকে শুরু করে আপনি যত রাকাত পড়তে পারেন। 

শেষ কথাঃ শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে 

একজন মুসলমান হিসেবে শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে এই সমন্ধে আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন। সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকাগণ, আজকে আমি আপনাদের সাথে শবে কদর ২০২৪ কত তারিখে এই বিষয় সহ শবে কদরের সকল খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যদি এই পোস্টটি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও মেয়েদের ইসলামিক নাম বাংলায় জেনে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

বিজ্ঞাপন