ইউটিউবের নতুন মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫: AI কন্টেন্ট ও কপি ভিডিওর দিন শেষ?

হ্যালো ইউটিউব ক্রিয়েটর বন্ধুরা! আপনারা যারা ইউটিউবকে ক্যারিয়ার হিসেবে দেখছেন বা ইতোমধ্যে মনিটাইজেশন পেয়ে আয় করছেন, তাদের জন্য একটি বড়সড় আপডেট আসছে। ইউটিউব তাদের ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম বা মনিটাইজেশন পলিসিতে এমন এক পরিবর্তন আনতে চলেছে, যার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলের মনিটাইজেশনও বাতিল হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, নতুন চ্যানেলগুলোর জন্য মনিটাইজেশন পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। 

ইউটিউবের নতুন মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫

এই পরিবর্তনটি মূলত টার্গেট করছে সেই সব ইউটিউব কন্টেন্টকে, যেগুলো আসল নয় বা খুব কম পরিশ্রমে তৈরি। আজকের এই পোস্টে আমরা ইউটিউবের এই নতুন আপডেটটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। জানাবো কোন ধরনের কন্টেন্ট এখন থেকে আর মনিটাইজেশন পাবে না এবং আপনার চ্যানেলকে সুরক্ষিত রাখতে ঠিক কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চলুন তবে ইউটিউবে নতুন মনিটাইজেশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেই। 

ইউটিউবের নতুন মনিটাইজেশন আপডেটটি আসলে কী?

ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে যে জুলাই ১৫, ২০২৫ থেকে তাদের নতুন মনিটাইজেশন পলিসি কার্যকর হবে। এই আপডেটের মূল উদ্দেশ্য হলো ইউটিউব প্ল্যাটফর্মকে আরও পরিচ্ছন্ন এবং মানসম্মত রাখা। ইউটিউব সবসময়ই "অরিজিনাল" (Original) এবং "অথেনটিক" (Authentic) বা আসল কন্টেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। নতুন এই পলিসির মাধ্যমে তারা এখন আরও কঠোরভাবে সেই সব কন্টেন্ট শনাক্ত করবে, যেগুলো বড় পরিমাণে (Mass-produced) এবং একই ধরনের (Repetitious) হয়।

সহজ কথায়, যেসব চ্যানেল অল্প পরিশ্রমে, বিভিন্ন এ আই টুলস ব্যবহার করে কপি বা প্রায় একই ধরনের শত শত ভিডিও তৈরি করে, তাদের জন্য বড়সড় দুঃসময় আসছে।  

কোন ধরনের চ্যানেলগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে?

এই নতুন আপডেটের ফলে নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরির চ্যানেল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, আপনার চ্যানেলটি এই তালিকায় পড়ছে কি না।

১. AI জেনারেটেড কন্টেন্ট (AI-Generated Content)

বর্তমানে AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভিডিও তৈরি করা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর মধ্যে অনেক কিছুই এখন ইউটিউবের নতুন পলিসির আওতায় পড়বে। যেমন:

AI ভয়েস: রোবটিক বা জেনেরিক AI ভয়েস ব্যবহার করে তৈরি করা ভিডিও। কারণ একই ভয়েস হাজার হাজার চ্যানেলে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা কন্টেন্টের মৌলিকত্ব নষ্ট করে।

AI স্ক্রিপ্ট ও ভিডিও: কোনো একটি টুলকে কমান্ড দিয়ে বাল্ক পরিমাণে ভিডিও তৈরি করা, যেখানে ক্রিয়েটরের নিজের কোনো সৃজনশীলতা নেই।

২. রিপিটেটিভ বা একই ধরনের কন্টেন্ট

যেসব ভিডিওতে নতুনত্ব নেই এবং একই ধাঁচে তৈরি, সেগুলোও ঝুঁকির মুখে পড়বে। যেমন:

স্লাইডশো ভিডিও: শুধু কয়েকটি ছবি এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে তৈরি করা স্লাইডশো।

কম্পাইলেশন ভিডিও: অন্যের ভিডিওর ছোট ছোট অংশ কেটে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা ভিডিও, যেখানে আপনার নিজস্ব মূল্যবান কোনো ধারাভাষ্য বা প্রতিক্রিয়া নেই।

টেমপ্লেট-ভিত্তিক ভিডিও: একই টেমপ্লেট ব্যবহার করে শুধু লেখা বা ছবি পরিবর্তন করে বারবার ভিডিও বানানো।

৩. মিনিমাল এফোর্ট বা কম পরিশ্রমে তৈরি ভিডিও

অনেক চ্যানেল আছে যেখানে ক্রিয়েটর খুব কম পরিশ্রম করে ভিডিও আপলোড করেন। যেমন:

লো-এফোর্ট রিঅ্যাকশন ভিডিও: অন্যের একটি পুরো ভিডিও চালিয়ে দিয়ে স্ক্রিনের এক কোণায় বসে থাকা, কিন্তু কোনো অর্থবহ প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য না করা।

স্ক্রিন রেকর্ডিং: কোনো অ্যাপ বা গেমের স্ক্রিন রেকর্ড করে কোনো ভয়েসওভার বা ব্যাখ্যা ছাড়াই আপলোড করে দেওয়া।

৪. ইউটিউব অটোমেশন চ্যানেল

ইউটিউব অটোমেশন চ্যানেল, যেগুলো মূলত ভাড়া করা ভয়েস আর্টিস্ট, স্ক্রিপ্ট রাইটার এবং এডিটর দিয়ে বাল্ক কন্টেন্ট তৈরি করে, সেগুলোও এই আপডেটের ফলে বড় সমস্যায় পড়বে। কারণ এই ধরনের কন্টেন্ট প্রায়ই রিপিটেটিভ এবং ইনঅথেনটিক বা কৃত্রিম হয়।

কেন ইউটিউব এই কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে?

ইউটিউবের এই পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ হলো প্ল্যাটফর্মের গুণমান ধরে রাখা।

আসল ক্রিয়েটরদের পুরস্কৃত করা: যারা নিজেদের মেধা, সময় ও পরিশ্রম দিয়ে অরিজিনাল কন্টেন্ট তৈরি করছেন, ইউটিউব তাদের এগিয়ে রাখতে চায়।

দর্শকদের ভালো অভিজ্ঞতা দেওয়া: দর্শকরা যেন মানসম্মত ও নতুন কিছু দেখতে পায়, তা নিশ্চিত করা।

স্প্যাম কন্টেন্ট কমানো: বাল্ক বা স্প্যাম ভিডিও দিয়ে প্ল্যাটফর্ম ভরে গেলে আসল কন্টেন্ট হারিয়ে যায়। ইউটিউব এটি বন্ধ করতে চায়।

তাহলে মনিটাইজেশন ধরে রাখতে এখন কী করবেন?

এই আপডেট দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি যদি একজন সত্যিকারের ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন, তাহলে এটি আপনার জন্য একটি বড় সুযোগ। আপনার চ্যানেলকে  সুরক্ষিত রাখতে এবং ভবিষ্যতে সফল হতে নিচের বিষয়গুলোর ওপর বেশি করে জোর দিন: 

নিজস্বতা ফুটিয়ে তুলুন: আপনার ভিডিওতে নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলুন। সম্ভব হলে নিজের চেহারা (Face) দেখান এবং নিজের কণ্ঠে (Voice) কথা বলুন।

সৃজনশীল (Creative) হোন: আপনার ভিডিও এডিটিং, স্টোরি টেলিং এবং উপস্থাপনার মাধ্যমে সৃজনশীলতার ছাপ রাখুন।

কন্টেন্টে ভ্যালু যুক্ত করুন: (Add Value): আপনি যে বিষয়েই ভিডিও বানান না কেন, তাতে নতুন তথ্য, বিশ্লেষণ বা বিনোদন যোগ করুন যা দর্শক অন্য কোথাও সহজে পাবে না। 

ফেসলেস চ্যানেল চালালে সতর্ক হোন: আপনি যদি চেহারা না দেখিয়ে চ্যানেল চালাতে চান, সেটাও সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে আপনার ভয়েসওভার, স্ক্রিপ্ট এবং এডিটিং হতে হবে অসাধারণ ও সম্পূর্ণ মৌলিক। আপনার কাজের মধ্যে নিজস্ব স্টাইল থাকতে হবে।

শেষ কথাঃ ইউটিউবের নতুন মনিটাইজেশন পলিসি ২০২৫ 

ইউটিউবের এই নতুন পলিসি প্রমাণ করে যে শর্টকাট বা কপি-পেস্ট করে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে তারাই ইউটিউবে সফল হবে, যারা নিজেদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে দর্শকদের জন্য মানসম্মত এবং অরিজিনাল কন্টেন্ট তৈরি করবে।

তাই, অন্যের কন্টেন্ট কপি করা বা AI দিয়ে সহজে ভিডিও বানানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নিজের দক্ষতার উপর বিশ্বাস রাখুন এবং দর্শকদের এমন কিছু উপহার দিন, যা তারা আগ্রহ নিয়ে দেখবে। আপনার যাত্রা সফল হোক। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

বিজ্ঞাপন