বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর (অনার্স প্রথম বর্ষ)

বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর এই প্রশ্নটি অনার্স প্রথম বর্ষের বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এই বিষয় থেকে প্রতি বছরই প্রশ্নটি আসে। তাই আপনারা যারা এবছর অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন তারা এই প্রশ্নটি বারবার পড়ে যাবেন। 

বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর (অনার্স প্রথম বর্ষ)

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সমন্বয়ে যে জাতিগোষ্ঠির উদ্ভব হয় তাকে সংকর জাতি বলা হয়। বাঙ্গালি এক বা একক কোন জাতিগোষ্ঠি নয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির সমন্বয়ে বাঙ্গালি জাতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাঙ্গালি জাতিকে একটি সংকর জাতি বলা হয়।  

বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর

বাঙ্গালি এক বা একক কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী না হওয়ার কারণে বাঙ্গালী জাতীকে সংকর জাতি বলা হয়। তাই আপনারা যারা এবছর অনার্স প্রথম বর্ষের বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়টি পরীক্ষা দিবেন তারা মনোযোগ সহকারে এই প্রশ্নটি কয়েকবার পড়ে যাবেন। নিম্নে এই প্রশ্নটির উত্তর উল্লেখ করা হলো- 

ভূমিকাঃ

বাঙ্গালি এক বা একক কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী নয়। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মিশ্রণ-বিরোধ ও সমন্বয়ের মাধ্যেমে বাঙ্গালি জাতিগোষ্ঠি তৈরি হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণ করতে যারা নিরলসভাবে কাজ করেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন স্যার হার্বার্ট রিজলি, পন্ডিত র বিরজশঙ্কর গুহ, রামপ্রসাদ চন্দ্র সহ আরও অনেকেই। পন্ডিত বা বিশেষজ্ঞদের মত হলো, বাঙ্গালি জাতি হলো নতুন একটি মিশ্র জাতি। 

ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশে প্রথম যে জনগোষ্ঠি বসবাস শুরু করে তারা হলো নিগ্রোয়েড বা অস্ট্রেলয়েড শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ধীরে ধীরে এদের সাথে যুক্ত হয়েছে দ্রাবিড়,আলপিয়ান, মঙ্গলয়েড, নর্ডিক, আরবীয় সহ আরও বহু জাতি। আর্যরা বাংলায় আসে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আগেই। এরপর মিশ্রণ অব্যহত থাকে। অনেকগুলো জাতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠেছে এই বাঙ্গালি জাতি। এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগহৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলিম অধিকারের পূর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। 

দ্রাবিড়ঃ 

নাক চওড়া, মাথা লম্বা, ও উন্নত চুল কালো ও বাদামি। গায়ের রং কালো থেকে বাদামি। ঠোট প্রুরু, উচ্চতা খাটো মুখ গহব্বর বড়কৃতির, মুখাবয়ব তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট। সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা দ্রাবিড় ভাষাভাষী আলপাইন গোত্রের এই নরগোষ্ঠী মূলত ভূ-মধ্যসাগরীয়। 

মঙ্গলয়েডঃ 

চোখের পাতা সামনের দিকে ঝোলানো, গায়ের রঙ পীতাভ থেকে বাদামী, চুলের রং কালো ও ঋজু, মাথার আকৃতি গোল। এই জনগোষ্ঠি দক্ষিণ-পশ্চিম চীন থেকে এই অঞ্চলে এসেছে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে এদের মূল বসবাস। 

আর্য বা ককেশীয় জনগোষ্ঠি 

প্রটো অস্ট্রেলয়েডদের পর ককেশীয়রা এদেশে প্রবেশ করে তাই এদেরকে আর্য বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, বাংলাদেশের জনপ্রকৃতিতে আর্য ভাষাভাষী একটি ধারা এসে প্রভাবিত করে। আর্যরা দ্রাবিড় ভেড্ডিদের পদানত করে ভারতবর্ষে বর্ণপ্রথার জন্ম দেন। শরীরের গড়ন বলিষ্ঠ, মাথার আকৃতি লম্বা এবং সরু নাক আর্যদের প্রধান লক্ষণ।

নেগ্রেটো 

গায়ের রঙ কৃষ্ণবর্ণ, খর্বাকৃতি, বেঁটে, ঠোঁট প্রুরু এবং নাক অতি চ্যাপ্টকৃতির। এই নেগ্রেটো জাতিগোষ্ঠি বাংলা জনগোষ্ঠির প্রথম স্তর। সুন্দরবন, যশোরের বাশঝোড়, ময়মনসিংহ এবং নিম্নবঙ্গের জনের মধ্যে এর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।

অস্ট্রিক বা অস্ট্রোলয়েড 

নাক চওড়া, গায়ের রঙ মিশমিশে কালো, মাথার গড়ন লম্বাকৃতি, দেহের গড়ন বেঁটে কিংবা মধ্যকার। এরা অনেক সময় ডেভিড কিংবা নিষাদ নামেও পরিচিত। বাঙ্গালি জাতির মধ্যে অস্ট্রিক বা অস্ট্রোলয়েড জাতির প্রভাব সবচেয়ে বেশী। ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ থেকে  ৬ বছর আগে এরা এ অঞ্চলে বসবাস করার জন্য আসে। সাঁওতাল,কোল,মুন্ডা, ভূমিজ, মালপাহাড়ি, বাউরি, চন্ডাল সহ আরও অনেক জাতির সাথে অস্ট্রিক জনগোষ্ঠির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। কুড়ি, পণ, চন্ডাল, প্রভৃতি হিসাব, চোঙ্গা, দা, লাউ, লেবু প্রভৃতি এসব অস্ট্রিক ভাষার শব্দ। 

আরব জাতি 

সপ্তম ও অষ্টম শতকে আরবরা বাংলায় আসে। পরবর্তীতে আফগান, তুর্কি, আবিসিনিয়ান, ইরানী, মুঘল মুসলমানরা বাংলায় বসতি স্থাপন করে এবং বাংলায় বসবাস শুরু করে।

ইউরোপীয় জাতি 

ইউরোপীয় জাতি ১৬ শতকের সময়ে বাংলায় আগমন করে বাঙ্গালি জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরপরে বাংলায় ইংরেজরা আগমন করে। 

আলপাইন জাতি 

দ্রাবিড়দের পরে ভারতে আলপাইন জাতি প্রবেশ করে। বাঙ্গালি,গুজরাটি, মারাঠি, ওড়িশি জাতি পূর্ব পূরূষদের মধ্য অনেকেই আলপাইন জাতিগোষ্ঠির লোক ছিল। আলপাইনদের কোন কালে দল রাঢ়, সুক্ষ্ণ, বঙ্গ, পুন্ড এসব অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করেন। এরা বিহার উড়িষ্যা হয়ে কাশী এবং পূর্ব আসামের কামরূপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এদের থেকে আজ আমরা বাঙ্গালি জাতিতে পরিণত হয়েছি। 

আর্য ও পরবর্তী ধারা 

আর্য জাতি ছাড়াও এই দেশে অনেক জাতি প্রবেশ করে বসতি স্থাপন করে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাদের সংমিশ্রণেও বাঙ্গালি জাতি গঠনে সহয়তা করে। পারস্যের তুর্কীস্তান থেকে সাবা জাতির লোকের এই দেশে আসে। এদেশে আসার পর তারা ভারতের পূর্বাঞ্চলে ও বাংলা বসতি স্থাপন করেন। 

শেষ কথাঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাঙ্গালি জাতির উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-মতামত থাকলেও বাঙ্গালি জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব পাওয়া যায়নি। বর্তমান বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির মধ্য আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক জীবনযাত্রা, আচার-অনুষ্ঠান সবকিছুর মধ্যেই একই ধরনের পরিলক্ষিত হয়। তাই বাঙ্গালি জাতি একটি সংকর জাতি। 

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনায় আমরা বাঙালি সংকর জাতি হওয়ার কারণ সমন্ধে জানতে পারলাম। বাঙ্গালি জাতি এক বা একক কোন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী নয়। সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন জনগোষ্ঠির মিশ্রণ-বিরোধ ও সমন্বয়ের মাধ্যেমে বাঙ্গালি জাতিগোষ্ঠি তৈরি হয়েছে। তাই বাঙ্গালি জাতিকে সংকর জাতি বলে সম্বোধন করা হয়েছে। যদি এই পোস্টটি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনারা অনার্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাছে শেয়ার করতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ!  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

বিজ্ঞাপন